যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার হুমকি, জটিলতায় রাশিয়া-তুরস্ক বাণিজ্য

রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকির প্রভাব পড়েছে তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যকার বাণিজ্যে। এতে তুরস্কে রাশিয়া যে তেল রপ্তানি করছে এবং রাশিয়া তুরস্ক থেকে যেসব পণ্য আমদানি করছে, সেগুলোর মূল্য পরিশোধে বিলম্ব ও বিঘ্ন ঘটছে।

রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র যে নির্বাহী আদেশ দিয়েছে, তা অবশ্য সুনির্দিষ্টভাবে জ্বালানি খাত লক্ষ্য করে দেওয়া হয়নি। তবে এর ফলে তুরস্কের পক্ষে রাশিয়া থেকে আমদানি করা তেল এবং রাশিয়ার পক্ষে তুরস্ক থেকে আমদানি করা পণ্যের মূল্য পরিশোধ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য হচ্ছে, তেল বিক্রি করে পাওয়া অর্থ যাতে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহার করতে না পারে, সে সম্ভাবনা কমানো। বিশ্ববাজারে তেল সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করা অবশ্য তাদের উদ্দেশ্য নয়। চলতি বছরের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আবারও নির্বাচিত হওয়ার লক্ষ্যে এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ফলে বিশ্ববাজারে তেল সরবরাহ ব্যাহত করে নিজের দেশে গ্যাসোলিনের দাম বৃদ্ধি করার মতো বিপদে তিনি পড়তে চান না।

তবে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা এই প্রথম নয়। এর আগে একই ধরনের নিষেধাজ্ঞার কারণে ভারতের পক্ষে রাশিয়ার তেল কেনা কঠিন হয়েছিল। সেই সঙ্গে চীন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের জন্যও বিষয়টি জটিল হয়েছে।

ন্যাটোর সদস্যদেশ তুরস্ক জ্বালানির দিক থেকে একেবারেই দরিদ্র। তুরস্কের কাছে সবচেয়ে বেশি অপরিশোধিত তেল ও ডিজেল রপ্তানি করে রাশিয়া। গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে তুরস্কের কাছে রাশিয়া ৮৯ লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত তেল ও ৯৪ লাখ টন ডিজেল বিক্রি করেছে।

এখন সমস্যা হচ্ছে তুরস্কের ব্যাংকগুলো ব্যবসা পর্যালোচনার পাশাপাশি রাশিয়ার জন্য অর্থছাড়ের নিয়ম পরিপালন করার বিষয়ে কঠোরতা আরোপ করেছে। তবে তেল খাতবিষয়ক দুটি সূত্র বলেছে, তুরস্কের ব্যাংকগুলো তেল পরিবহন বাধাগ্রস্ত করছে না এবং এখন পর্যন্ত খুবই কমসংখ্যক কার্গোর যাত্রা বিলম্বিত হয়েছে।

অন্যদিকে রাশিয়ার তেল খাতের একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, রাশিয়ার তেল রপ্তানিকারকেরা গত দু–তিন সপ্তাহে তুরস্কের কাছ থেকে অর্থ পাননি। তুরস্কের সূত্র জানিয়েছে, গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞার পর থেকে রাশিয়ার তেল রপ্তানিকারকদের মূল্য পরিশোধ করা কঠিন হয়ে গেছে।

সূত্রগুলো রয়টার্সকে আরও জানিয়েছে, যে পদ্ধতিতে অর্থ পরিশোধ করার কথা ছিল, তা পরিবর্তন করতে হয়েছে বা কিছু অর্থ পরিশোধ স্থগিত করতে হয়েছে। কিন্তু জাহাজীকরণ অব্যাহত ছিল। তবে কিছু সমস্যা যে ছিল কার্গোভিত্তিক হিসাব করলে তা বোঝা যায়।

তুরস্ক এমনিতে মস্কোর ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার বিরোধী। তবে দুই বছর ধরে তারা ধারাবাহিকভাবে রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়ের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছে। আঙ্কারা জোর দিয়ে বলেছে, তুরস্কের মাটিতে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ হবে না। যেসব পণ্যের দ্বৈত ব্যবহার আছে, সেগুলো যেন কোনোভাবে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর কাজে আসতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে ওয়াশিংটন গত বছর চাপ বৃদ্ধি করেছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক করে দিয়েছে, তুরস্কের ব্যাংকগুলো নিষেধাজ্ঞা না মানলে তারা পরোক্ষ নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে পারে।

সুত্র: প্রথম আলো

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Basket