বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি হচ্ছে না বেশির ভাগ পণ্য

সরকার বেশ কিছু নিত্যপণ্যের ‘যৌক্তিক মূল্য’ নির্ধারণ করে দিলেও তা মানার ব্যাপারে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না রাজধানী ঢাকার খুচরা বিক্রেতাদের। রোজার মধ্যে পণ্যের বাড়তি দাম নিয়ন্ত্রণে গত শুক্রবার মোট ২৯টি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকারি সংস্থা কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। এক সপ্তাহ পর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নির্ধারিত সেই দরে বাজারে পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। তবে গত এক সপ্তাহে খুচরা বাজারে কয়েকটি পণ্যের দাম কমলেও কিছু পণ্যের দাম বরং আগের তুলনায় বেড়েছে। 

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেওড়াপাড়া, তালতলা ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ঘুরে এবং ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে আলু, রসুন, জিরা ও চালের দাম বেড়েছে। তবে এ সময় কমেছে পেঁয়াজ, ব্রয়লার মুরগি, মসুর ডাল ও ডিমের দাম। এ ছাড়া কমেছে কয়েক ধরনের সবজির দামও। তবে এসব পণ্যের দাম কমলেও তা সরকারের ঘোষণা করা যৌক্তিক মূল্যের চেয়ে এখনো বেশি। 

যেমন রোজার শুরুতে প্রতি কেজি ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম ছিল যথাক্রমে ২৩০ ও ৩৪০ টাকা। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ব্রয়লার মুরগি ২১০ টাকা ও সোনালি মুরগি ৩১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অথচ কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ব্রয়লার মুরগির দাম ১৭৫ টাকা ও সোনালি মুরগির দাম ২৬২ টাকা কেজি নির্ধারণ করেছে। 

এ বছর রোজা শুরুর আগেই কিছু পণ্যের দাম হঠাৎ বেড়ে যায়। আর কিছু পণ্য আগে থেকেই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছিল। ফলে রোজার সময় অতিরিক্ত খরচের চাপ নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন সাধারণ মানুষ। এমন প্রেক্ষাপটে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা কৃষি বিপণন অধিদপ্তর উৎপাদন খরচ বিবেচনায় ২৯টি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয়। 

এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে সরকার ডিম, আলু ও দেশি পেঁয়াজের দাম বেঁধে দিয়েছিল। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ পার হওয়ার পরও যখন বাজারে এই তিন পণ্যের দাম কমেনি, তখন সরকার ডিম ও আলু আমদানির অনুমতি দেয়। এরপর এসব পণ্যের দাম কমে আসে। 

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬৬৫ টাকা বিক্রি হওয়ার কথা। তবে গতকাল রাজধানীর তিনটি বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, ৭৫০-৭৮০ টাকা কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে। উত্তর শাহজাহানপুরের খলিল গোশত বিতানে রোজার শুরুর দিন থেকে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫৯৫ টাকা বিক্রি করা হচ্ছিল। তবে সে দোকানেও দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ওই দোকানে এখন গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬৯৫ টাকায়। 

একইভাবে খুচরা পর্যায়ে মসুর ডাল (মোটা) ১০৫ টাকা ৫০ পয়সা, পাঙাশ মাছ (চাষের) প্রায় ১৮১ টাকা, কাতল মাছ (চাষের) প্রায় ৩৫৪ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৬৫ টাকা ও আলু প্রায় ২৯ টাকায় বিক্রির নির্দেশনা দেয় কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। কিন্তু বাজারে এসব পণ্য ৫ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। 

দাম বেঁধে দেওয়া ২৯ পণ্যের মধ্যে ১৩টির দর জানা যায় সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মূল্যতালিকা থেকেও। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে দুই ধরনের মসুর ডাল, ছোলা, খেজুর, আলু, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, শুকনা মরিচ, গরুর মাংস, ছাগলের মাংস, ব্রয়লার মুরগি ও ডিম। টিসিবির হিসাবে ডিম, দেশি রসুন ও দেশি পেঁয়াজ ছাড়া বাকি পণ্য নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। 

এদিকে রোজার আগে দাম স্থিতিশীল থাকলেও এখন আবার বাড়তে শুরু করেছে চালের বাজার। আগারগাঁও তালতলা বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, গত এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতি কেজি চালের দাম ১-২ টাকা বেড়েছে। যেমন মাঝারি জাতের পাইজাম চাল কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে যেসব দোকানে আগের কেনা চাল রয়েছে, তারা কিছুটা কম দামে বিক্রি করছে। 

বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী মো. আশিকুল ইসলাম নিয়মিত বাজার করেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘দেখা যায়, সরকারের তোড়জোড়ে এক পণ্যের দাম কমে; কিন্তু আবার একই সময়ে আরও পাঁচ পণ্যের দাম বাড়ে। সরকার পণ্যের যে দাম ঠিক করে দেয়, তা নিয়ে দোকানে কথা বলতে গেলে ক্রেতার সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়। জিনিসপত্রের দাম নিয়ে আমাদের কোনো স্বস্তি নেই।’ 

আলু-পেঁয়াজের দাম বাড়তি

বাজারে আলুর দাম নতুন করে কেজিতে ৫-১০ টাকা বেড়েছে। এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি আলু ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হতো; এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকায়। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর আলুর দাম নির্ধারণ করেছে প্রতি কেজি ২৮ টাকা ৫৫ পয়সা। টিসিবির গতকালের বাজারদরের তথ্যেও দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন আলুর দাম ১৩ শতাংশের বেশি বেড়েছে। 

এ ছাড়া বেড়েছে আমদানি করা রসুন ও জিরার দামও। রসুনের দাম কেজিতে ১০-১৫ টাকা বেড়ে হয়েছে ২০০ টাকা। আর জিরার দাম কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে ৮০০ টাকা হয়েছে। 

দিন দশেক আগে ঢাকার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। এরপর বাজারে নতুন হালি পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়লে দাম কমে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় নেমে আসে। গত দুই দিনে দেশি পেঁয়াজের দাম আবার বেড়ে ৫৫ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

সুত্র:প্রথম আলো

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Basket